অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন করার সঠিক নিয়ম (নতুন/রি-ইস্যু/কনভার্সন)

শেয়ার করুন:

বাংলাদেশে (e-Passport) ই পাসপোর্ট এসেছে অনেকদিন হলো। অনেকেই ইতিমধ্যে ইপাসপোর্ট করেছেন, আবার অনেকেরই এমআরপি পাসপোর্ট রয়েছে সেটিার মেয়াদ শেষ হলে, এমআরপি থেকে ই পাসপোর্ট করবেন বলে ভাবছেন।

আমাদের আজকের ব্লগে আপনাদের সাথে শেয়ার করবো কিভাবে আপনি আপনার পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্টের জন্য নিজেই আবেদন করতে পারবেন। এছাড়াও আপনার যদি পূর্বের পাসপোর্ট থাকে, সেটাকে রিনিউ করাতে চান বা এমআরপি থেকে ই পাসপোর্টে রূপান্তর করাতে চান, সেটাও কিভাবে করবেন তাও বিস্তারিত জানাবো।

আরও পড়ুন: কিভাবে ই পাসপোর্ট থেকে এম আরপি পাসপোর্টে রূপান্তর করবেন।

শুরুতেই চলুন দেখে নেই কিভাবে ই পাসপোরের্টর আবেদন করবেন?

ই পাসপোর্টের আবেদন করার ক্ষেত্রে আমি আপনাদের রিকমেন্ড করবো, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন না করে, আপনি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহার করে আবেদন করুন। যেহেতু আপনি নিজেই আবেদন করবেন তাই যেভাবে করলে আপনার জন্য ভালো সেভাবেই আমি আপনাদের রিকমেন্ড করবো।

আপনি চাইলে আমাদের এই ভিডিওটি দেখেও নিজে নিজে আবেদন করতে পারেন

প্রথমেই চলে যাবেন Google Chrome ব্রাউজারে গিলে লিখবেন – www.epassport.gov.bd

E-Passport Online Registration Portal এ ক্লিক করে সরাসরি ঢুকে যাবেন ই পাসপোর্ট আবেদনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে। আসার পর নিচের ছবির মেত একটি এন্টারফেস আপনি দেখতে পাবেন।

আপনি চাইলে বাংলায় বা ইংরেজীতে আবেদন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য উপরে থাকা ভাষা ট্যাব থেকে ”English” অথবা “বাংলা” নির্ধারণ করে আপনার মন মতো আপনি আবেদনের ভাষা নির্ধারণ করতে পারেন। আমারা ইংরেজীতেই আবেদন টা প্রসেস করবো। খুবই সহজ আপনারা নিচের বিষয়গুলো ফলো করলেই আবেদন করতে পারবেন।

Apply Online for e-Passport/Re-Issue তে ক্লি করে ঢুকে যাবেন আবেদন ফরমের প্রথম ধাপে।

তারপর Check Availability of e-Passport in your region এর জায়গায় এসে Are you applying from Bangladesh? এখানে Yes টিক মার্ক দিয়ে জেলা এবং থানা নির্ধারণ করে Continue তে প্রেস করবেন। কন্টিনিউ প্রেস করার সাথে সাথেই আপনার আবেদনটি কোন আঞ্চলিক অফিসের অধীনে তা আপনাকে স্ক্রীণে দেখানো হবে।

Are you applying from Bangladesh?

পরবর্তী পেইজে আসার পর আপনাকে একটি ইমেইল ঠিকানা দিতে হবে, যেটা আপনার পাসপোর্ট আবেদন এর প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য আপনার একাউন্ট তৈরী করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে।

Continue তে আসার পর Step 3 : Enter your account information এর জায়গায় নিচের  ধাপগুলো আপনাকে অনুসরণ করতে হবে।

প্রথমে আপনাকে আপনার একাউন্ট তৈরী করার জন্য একটি পাসওয়ার্ড দিতে হবে। পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়ে গেলে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ (ইংরেজী ভার্সন) এর তথ্যানুসারে আপনার নামের প্রথম অংশ Given Name এবং দ্বিতীয় অংশ Surename এর বক্সে ফিলাপ করবেন।

* এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে আমার কোন পরিচয়পত্র দিয়ে আমি আসলে আবেদন করবো? *

১। জাতীয় পরিচয় পত্র

২। জন্ম নিবন্ধন সনদ? 

কোনটি?

চিন্তার কিছু নেই বলে দিচ্ছি-

  • বয়সঃ ০-১৮ = জন্ম নিবন্ধন সনদ (যেটা অবশ্যই ইংরেজী ভার্সন এবং অনলাইনে তথ্য সনাক্তযোগ্য)
 
  • বয়সঃ ১৮ উর্ধ্ব হলে = জাতীয় পরিচয় পত্র অবশ্যই দিতে হবে।

তবে আপনি যদি বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশন থেকে পাসপোর্টের আবেদন করেন তাহলে, ১৮ থেকে ২০ বছর সিমার মধ্যেও জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে আবেদন করতে পারবেন।

অতপরঃ আপনার মোবাইল নম্বর দিয়ে এই অংশটি পরিপূর্ণ করে পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য I am human বক্সে টিক মার্ক দিয়ে Create Account এ ক্লিক করে পরবর্তীতে পেইজে চলে যাবেন।

তারপর এমন একটি পেইজ আপনাকে প্রদর্শন করিয়ে বলা হবে Step 4: Active e-Passport account তার মানে আপনি যে ইমেইল এড্রেসটি দিয়ে একাউন্ট খুললেন, সেই ইমেইলে একাউন্ট একটিভ করার জন্য একটিভেশন লিংক পাঠানো হয়েছে।

চলে যাবেন ইমেইলে। পেয়ে যাবেন নিম্নে উল্লেখিত ছবির মতো একটি ইমেইল, যেখানে Click Here এ ক্লিক করে আপনার একাউন্ট টি একটিভেট করবেন।

একটিভ করার পর আপনার ইমেইল এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে (যেগুলো দিয়ে ইতমধ্যে আপনি একাউন্ট খোলার প্রসেস করেছেন) আপনার একাউন্ট Sign In করবেন।

কোনো কারণে পপ আপ বক্স থেকে সাইন ইন না হলে উপরের সাইন ইন অপশন থেকে সাইন ই করে নিবেন।
ছবি সাইন ইন করার পর এবার ই পাসপোর্ট আবেদন শুরু- Apply for a new e-Passport এ ক্লিক করে আবেদন করা শুরু করবেন।

প্রথমেই আপনার পাসপোর্ট টাইপ নির্ধারণ করতে হবে। সাধারণ জনগণ হলে Ordinary Passport নির্ধারণ করবেন, আর Official নির্ধারণ করবেন সরকারী অফিসিয়াল পার্সন বা ব্যক্তিবর্গগণ বা কুটনৈতিকরা। নির্ধারণ করে Save and continue তে ক্লিক করে পরবর্তী পেইজে চলে যাবেন।

তারপর আপানার পার্সোনাল ইনফরমেশন দিতে হবে। যার নামে এবং তথ্য দিয়ে একাউন্টটি খোলা হয়েছে তার নিজের আবেদন হলে I apply for myself বাটনটিতে ক্লিক করে দিবেন।  আর যদি নিজের নামে একাউন্ট খুলে পরিবারের অন্য কোনো ব্যক্তির পাসপোর্ট এর আবেদন করেন তবে I apply for myself বাটনটিতে ক্লিক করবেন না, ফলে আপনাকে নিচে, যার আবেদন করবেন তার তথ্য পূর্ণ করতে হবে।  তার পর পেইজে আসা ব্যক্তিগত তথ্যগুলো পূর্ণ করবেন (জাতীয় পরিচয়ত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ অনুযায়ী)। যেখানে আপনার নাম, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান জেলা, পেশা, জাতীয়তা, পিতা মাতার নাম, লিঙ্গ, ধর্ম ইত্যাদি।

তারপর Save and continue তে ক্লিক করে পরর্বতী পেইজে আসবেন। যেখানে আপনার ঠিকানা সম্পর্কিত তথ্য পূর্ণ করতে হবে।

প্রথমে আপনার স্থায়ী ঠিকানার তথ্য দিতে হবে তারপর বর্তমান ঠিকানা। আর যদি আপনার ২টি ঠিকানা একই হয় তাহলে টিক বক্সে ক্লিক করে দিবেন। আর আলাদা আলাদা হলে আলাদা করে দিতে হবে।

বিঃ দ্রঃ আপনার ঠিকানা দুটি হলে অবশ্যই আপনার দুই জায়গাতে পুলিশ ভ্যারিফিকেশন যাবে। আর আপনি যদি কোনো জায়গায় না থাকেন, কিন্তু সেই জায়গা বর্তমান ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করেন, তাহলে সেটা আপনার পাসপোর্ট আবেদন বাতিল হওয়ার অন্যতম কারণ হবে। (বাতিল হলে, প্রদানকৃত ফিও ফেরতযোগ্য না)

তারপর ID Documents এই জায়গায় এসে আপনাকে আপনার আবেদনের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। তার মানে আপনার আবেদনটি কি একদম নতুন আবেদন? নাকি রি-ইস্যু/রূপান্তর (এমআরপি টু ই পাসপোর্ট)

উপরের ছবিতে দেখানো অপশন থেকে আপনার আবেদনের ধরন নির্ধন করবেন –

  • আগের এমআরপি পাসপোর্ট থাকলে Yes, I have a Machine Readable Passport (MRP) নির্ধারণ করতে হবে।
  • আগের ই পাসপোর্ট থাকলে Yes, I have an Electronic Passport (ePP) নির্ধারণ করবেন।
  • একদম নতুন আবেদন (পূর্বের কোনো পাসপোর্ট নেই) হলে No, I dn’t have any previous passport/handwritten passport এ ক্লিক করে পরবর্তী ধাপগুলো অনুসরণ করবেন।

মনে রাখবেন, আপনার আগের পাসপোর্ট থাকা সত্বেও আপনি যদি গোপন করার চেষ্টা করে নতুন আবেদন করেন, তাহলে সিস্টেম আপনার আবেদন রিজেক্ট করে দেবে এবং আপনার প্রদানকৃত ফি ফেরতও পাবেন না।

আগের পাসপোর্ট আছে বলে উল্লেখ করলে, সেই পাসপোর্টের নম্বর, ইস্যুর তারিখ, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ইত্যাদি তথ্য পূর্ণ করতে হবে

আর যদি আপনার যদি এমআরপি থেকে ই পাসপোর্টে রূপান্তর হয়, তাহলে শুধু Conversion নির্ধারণ করলেই হবে এবং এমআরপি এর নম্বরসহ বাকীসব তথ্য প্রদান করতে হবে।

আমরা নতুন আবেদন দেখিয়ে বাকি কাজটুকু করবো-

তারপর আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর চাওয়া হবে, সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিবেন এবং Save and continue তে যাবেন। পরবর্তী ধাপে আপনাকে পিতা-মাতার তথ্য প্রদান করতে হবে।

যেখানে আপনি আপনার পরিচয়পত্র অনুসারে আপনার পিতা-মাতার নাম, পেশা, জাতীয়তা এবং ঐচ্ছিকভাবে তাদের জাতীয়পরিচয়পত্র নম্বর চাইলে দিতে পারেন। না দিলেও সমস্যা নেই।

এই পেইজে আরও একটি অপশন পাবেন অতিরিক্ত সেটা হলো Guardian information, যদি আপনি দত্তক নেওয়া হন, তাহলে আপনার আইনত লিগ্যাল অভিভাবক এর তথ্য দিতে হবে।

এরপর চলে আসবে Spouse Information এর জায়গা যেখাবে আপনি আপনার বৈবাহিক অবস্থার বর্ণনা দিবেন। এবং বিবাহিত হলে আপনার স্বামী/স্ত্রীর তথ্য দিতে হবে।

তারপর Save and continue তে আসার পর আপনাকে নিয়ে আসা হবে Emergency contact নামের একটি জায়গায়, যেখানে আপনার জন্যে জরুরী যোগাযোগের কোনো ব্যক্তির তথ্য দিতে হবে।  আপনি আপনার পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্বামী/স্ত্রী যাকে ইচ্ছে দিতে পারেন, তবে যার তথ্যই দেন, তার ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করতে হবে, যা আপনার পাসপোর্টের ডিটেইলস পেইজে Emergency contact হিসেবে উল্লেখ থাকবে।

তারপর আবারও Save and continue তে এসে আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ ও পৃষ্ঠার সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে।

তারপর Save and continue তে গিয়ে পাবেন Delivery Options & Appointment এই জায়গায় আপনার পাসপোর্টের ডেলিভারিটা কি আপনি রেগুলার নিতে চান? নাকি এক্সপ্রেস নিতে চান সেটা নির্ধারণ করতে হবে।

  • রেগুলার সম্ভাব্য পাসপোর্ট প্রাপ্তির সময়সীমাঃ ১৫ কর্মদিবস (কমবেশী হতে পারে)
  • এক্সপ্রেস ডেলিভারিতে পাসপোর্ট প্রাপ্তির সময়সীমাঃ ৭ কর্মদিবস (কমবেশী হতে পারে)

তারপর আপনি ঢাকার অভ্যন্তরীণ আবেদনের ক্ষেত্রে এমন এপয়েন্টমন্টে তারিখ ও সময় নির্ধারণ করার অপশন দেখতে পারবেন। যেখানে আপনার পছন্দসই সময় ও তারিখ আপনি নির্ধারণ করে নিবেন। তারপর Save and continue

মনে রাখবেন আপনার এপয়েন্টমেন্ট যদি পেয়ে থাকেন, তবে এপয়েন্টমেন্ট তারিখ এর আগে আপনি কিন্তু পাসপোর্ট অফিসে ফাইল সাবমিট করতে পারবেন না। আর যে সময়টা নির্ধারণ হয়, সেটা কমবেশি হলে সমস্যা নেই।

তবে নির্ধারিত তারিখেই যাওয়া উচিৎ।

এরপর আপনাকে Overview of application data – please check before submission এমন একটি পৃষ্ঠায় আপনার সকল পূর্ণকৃত তথ্য প্রদর্শণ করানো হবে, যেখানে আপনি আপানর সব তথ্য পুনঃরায় চেক করে নিতে পারেন, ভুল থাকলে Edit অপশনে ক্লিক করে এডিট করে নিতে পারেন।

তারপর উপরোক্ত পেইজের নিজে Declaration of consent বক্সে টিক মার্ক দিয়ে Confirm and proceed to payment বাটনে ক্লিক করবেন।

এই Confirm and proceed to payment ক্লিক করার পরই আপনার অনলাইন আবেদন সম্পন্ন হয়ে গেলো।

এবার আপনার এপ্লিকেশন সামারি এবং আবেদন ফরমটি ডাউনলোড করে রাখুন, কেনো না পাসপার্ট অফিসে ফাইল সাবমিট করার সময় আপনার অন্যান্য কাগজপত্রের সাথে এই দুটি কাগজই মুল হিসেবে গণ্য হবে।

ই পাসপোর্ট করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে?

– নিচের ভিডিওটি দেখলে আপনি সব বিস্তারিত জানতে পারবেন –

তাও আমি এখানে শর্ট করে বলে দিচ্ছি –

  • অ্যাপ্লিকেশন সামারি
  • পরিচয়পত্র (জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ)
  • পেমেন্ট স্লিপ (এ-চালান, ই-চালান বা ব্যাংক পেমেন্ট স্লিপ)
  • আগের পাসপোর্ট (যদি থাকে)
  •  সরকারী অফিসিয়ালদের জন্য GO/NOCকর্মচারী (যদি থাকে)
  • আবেদনের উপর নির্ভর করে অতিরিক্ত নথি
  • প্রিন্টকৃত আবেদনপত্র

ব্লগটি আপনার উপকারে আসলে বা ভালো লাগলে অবশ্যই অন্যদের সাথেও শেয়ার করতে ভুলবেন না।

লিখেছেন

সাইফুর রহমান আজীম

ইউটিউবার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর, ভ্লগার এবং নাশীদ শিল্পী


শেয়ার করুন:

2 thoughts on “অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন করার সঠিক নিয়ম (নতুন/রি-ইস্যু/কনভার্সন)”

  1. ভোটার আইডির ছবি কিভাবে পরিব´তন করতে হয়?

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *